2016 NEW MUSIC VIDEO

সাকিব আর সহারার গোপন ভিডিও দেখতে নিচের DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন

Monday, April 25, 2016

চট্টগ্রামের স্কুল ভবনগুলো সর্বাধিক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে

          চট্টগ্রামের স্কুল ভবনগুলো সর্বাধিক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে স্কুল ভবনগুলো সর্বাধিক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তলিয়ে যাবে নগরীর ৭০ শতাংশ উচুঁ ভবন। এর মধ্যে স্কুল ভবনই সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট)’র এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্কুল পড়ুয়া শিশুরাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।




চুয়েটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত ও ত্রুটিপূর্ণ নগরায়নে মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে নগরীর অধিকাংশ ভবনই টিকবে না। অথচ বৃহত্তর চট্টগ্রামে রিখটার স্কেলে ৭ বা ততোধিক মাত্রার শক্তিশালী ভূ-কম্পনের আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে একের পর এক ভূ-কম্পনের ঘটনা ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝে মধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার যে ভূকম্পন হচ্ছে তা বড় ভূকম্পনের ইঙ্গিত। আর এটিই এখন আতঙ্কের বড় কারণ।
অপরিকল্পিত নগরায়নে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা আঁতকে উঠার মতো। ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূ-স্তরে ৪টি বিপজ্জনক ফাটল লাইন প্রবল ভূ-কম্পনের দিক নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নগরীর খুলশী, মোহরা, মদুনাঘাট এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট (ডিসিসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে বলা হয়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড টেকনাফ ফল্ট বা ভূফাটল লাইন এবং রাঙ্গামাটির বরকল ফল্ট ও মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ ভূ-ফাটল লাইন থেকে যে কোন সময় ৬ বা এর চেয়ে বেশি মাত্রায় ভূ-কম্পন হতে পারে।
চুয়েটের ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও ভূ-স্তরের পাটাতনে ফাটলের কারণে ইউরোশিয়ান ও ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের ভূমিকম্পের জোনের মধ্যেই রয়েছে চট্টগ্রাম। এ প্লেট দুটি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
চুয়েটের সাবেক ভিসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম শহরের নির্মিত ৭০ ভাগ ভবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে স্কুল ভবনগুলো। বিশেষ করে সরকারি বিদ্যালয় ও কেজি স্কুল ভবনগুলো অযন্ত-অবহেলায় রয়েছে। ফলে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে কোমলমতি শিশুরা।
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম আলী আশরাফ বলেন, অতীতেও এ অঞ্চলে ভয়াবহ মাত্রায় ভূমিকম্প আঘাত করেছিল। ভূমিকম্পে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার বেল্ট বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, ভূ-পাটাতনের (টেকটোনিক প্লেট) একটি ফাটল বা ফল্ট লাইন চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল হয়ে আন্দামান পর্যন্ত চলে গেছে। অনেকগুলো ভূ-ফাটল লাইন, ভূমিকম্পের উৎসস্থল (ইপি সেন্টার) চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কাছাকাছি অবস্থানে সক্রিয় রয়েছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম আলী আশরাফ আরো বলেন, ছোট ছোট ভুমিকম্প শক্তিশালী ভুমিকম্পের পূর্বাভাস। যদিও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে দিনক্ষণ-সময় সুনির্দিষ্ট করে পূর্বাভাস দেয়া আজও সাধ্যের বাইরে। তবে ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগত কিছু আলামত ভূমিকম্পের আলামত বহন করে। যা থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
চুয়েটের সদ্য বিদায়ী ভিসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে অপরিকল্পিত ও গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ উপায়ে বাড়িঘর ও ভবনের হার শতকরা ৭৮ ভাগ। ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নকশা লঙ্ঘন করে অপরিকল্পিত, ত্রুটিপূর্ণভাবে এসব ভবন নির্মিত হয়েছে। যা মাঝারি বা শক্তিশালী ভূমিকম্পে অধিকাংশ ভবন ধসে পড়বে।
সিডিএমপির জরিপ মতে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ১ লাখ ৮০ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রার মধ্যে ভূমিকম্প হলে সেসব ভবনের অধিকাংশই বিধ্বস্ত হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের জরিপ রিপোর্ট মতে, জনসংখ্যার অব্যাহত চাপে ক্রমবর্ধিষ্ণু চট্টগ্রাম মহানগরীতে অপরিকল্পিত, দুর্বল-ভঙ্গুর, কারিগরি ত্রুটি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘরসহ বিভিন্ন ধরনের ভবনের হার দেশের অন্যান্য শহর নগরের তুলনায় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানসহ শহর ও শহরতলীতে নির্বিচারে পাহাড় টিলা ধ্বংস, গাছপালা সাবাড়, পুকুর, দীঘি ভরাটের মাধ্যমে রাতারাতি বাড়িঘর, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, কল-কারখানা স্থাপন করা হয়েছে এবং তা অব্যাহতভাবে চলছে বলেও জানানো হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে সাম্প্রতিককালে সংঘটিত ভূমিকম্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর। নগরীর কেন্দ্রস্থল হামজারবাগে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত একটি পাঁচতলা ভবন ধ্বসে ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ১৯৯৯ সালের ২২ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত মহেশখালী ভূমিকম্প, ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত রাঙ্গামাটির বরকল ভূমিকম্পটিও উল্লেখযোগ্য।

0 comments: